বাউফলে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি জনগনের কাজে আসছে না

বাউফলে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি জনগনের কাজে আসছে না

দেলোয়ার হোসেন , বাউফল প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আলগী নদীর ওপর নির্মিত সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যায়ে নুরাইনপুর-ভরিপাশা সেতুটি জনগনের কোন কাজে আসছে না। রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে নির্ধারিত স্থানে নির্মান না করায় গুরুত্ব হারিয়েছে সেতুটি। যার কারনে স্থানীয়রা আগের মতই নদী নৌকায় পারাপার হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ অনুমোদিত যে স্থানে সেতুটি নির্মানে স্থান নির্ধারন করেছিলেন,বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিএনপির সংসদ সদস্য সহিদুল আলম তালুকদার সেখান থেকে সরিয়ে সেতুটি অন্যত্র নির্মাণ করায় সেতুটি এখন কোন কাজে আসছে না। রাজনৈতিক রোষানালের কারনেই সেতুটির সুফল থেকে জনগন বঞ্চিত।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাউফল উপজেলা সুত্র জানায়, ১৯৯৯-২০০১ অর্থ বছরে আওয়ামীলীগের শাসনামলে স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজ উপজেলার কেশবপুর ও সূর্যমনি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ লাঘবে আলগী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। স্থাণীয় সরকার অধিদপ্তরের আওতায় ভরিপাশা-নুরাইনপুর খেয়াঘাট এলাকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্যে স্থান নির্ধারণ করে প্রকল্প অনুমোদন করেন।
২০০১ সালে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম তালুকদার এমপি নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। এরপর বাউফল উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রস্তাবিত সেতুর দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্র অনুযায়ী প্রস্তাবিত স্থান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও তাঁর মর্জিতে সেতুটি নির্মাণ করতে বাধ্য হন।
২০০৬ সালে ১৬ জুলাই সাংসদ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সেতুটি উদ্ধোধন করলেও এলাকার জনগণ ব্যবহার করছে না। তাঁরা আগের মতোই নূরাইনপুর খেয়াঘাটে এসে নৌকায় পারপার হচ্ছে।
কেশবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ভরিপাশা গ্রামের আলমগীর হোসেন (৫০),যেখানে লোকজনের চলাচল সেখানে সেতু নাই। আধা কিলোমিটার ঘুরেই যদি আসতে হয়, তাহলে আমাদের খেয়া নৌকাই ভালো। সূর্যমনি ইউনিয়নের বাসিন্দা নূরাইনপুর বাজারের দোকানি হেলাল খান বলেন, এখানে লঞ্চ ঘাটের পল্টুনে প্রতিদিন দুটি লঞ্চ থেকে প্রায় এক দেড়শ যাত্রী উঠানামা করে। সেতুটি অনেক দূরে হওয়ার কারণে অধিকাংশই লোকজন নৌকায় খেয়াপার হয়ে ভরিপাশা কেশবপুর যাতায়াত করেন।  
কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন,আওয়ামীলীগের এমপির প্রস্তাবিত স্থানে সেতুটি না করে বিএনপির সংসদ সদস্য শহিদুল আলমের খাময়োলিপনার খেসারত এখন দিচ্ছে এলাকাবাসী। মাঝখান থেকে সরকারের অর্থ ব্যয় হলেও জনগনের উপকারে আসছেনা।
সূর্যমনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, আওয়ামীলীগের এমপির শাসনামলে প্রস্তাব হয়েছে একস্থানে আর বিএনপি সরকারের এমপি করেছে অন্যখানে। রাজনৈতীক এই রোষানালের কারনে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হলো স্থানীয় জনগন। কার লাভ হলো? ফলাফল জনের যে দুর্ভোগ সেই দুর্ভোগ রয়ে গেছে। মাঝখান দিয়ে সরকারের কত গুলো টাকা অপব্যায় হলো।
বাউফল উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ বলেন, যদিও ওই সময় তাঁর কর্মস্থল বাউফল ছিল না।তবে এটা ঠিক পরিকল্পনা না করে জনস্বার্থে কোন স্থাপনা করলে তা জনগনের উপকারে আসবে না। কোন রোষানল না করে সবার উচিৎ পরিকল্পনা মাফিক জনগনের উপকারে আসে এমন স্থানেই স্থাপনা করা।